মডার্ন মোটরসাইকেল হেলমেট তৈরির প্রক্রিয়াটি মূলত চারটি ধাপে বিভক্ত:
- শেল (Outer Shell) তৈরি
- ইনার লাইনার (EPS Foam) তৈরি
- অ্যাসেম্বলি এবং ফিনিশিং
- গুণমান নিয়ন্ত্রণ ও প্যাকেজিং
ধাপ ১: বাইরের শেল তৈরি (ফাইবারগ্লাস/কম্পোজিট)
হেলমেটের শেল হলো প্রধান সুরক্ষা স্তর। এটি শক্তিশালী, কিন্তু নিয়ন্ত্রিতভাবে ফাটতে পারে, যাতে প্রভাব শোষিত হয়।
১. উপকরণ প্রস্তুতি:
- ফাইবারগ্লাস শীট, কার্বন ফাইবার বা আরামিড (Kevlar) শীট ব্যবহার করা হয়।
- এগুলো নির্দিষ্ট আকারে কাটা হয়। প্রিসিশন ডাই-কাটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়।
২. লে–আপ (Lay-Up):
- কাটানো ফাইবারগ্লাসের একাধিক স্তর মোল্ডের ভিতরে হাতে রাখা হয়।
- স্তরের সংখ্যা ও দিকনির্দেশনা হেলমেটের শক্তি ও ওজন নির্ধারণ করে।
- মোল্ড সাধারণত ধাতব এবং হেলমেটের আকার অনুযায়ী সঠিকভাবে মেশিন করা হয়।
৩. রেজিন প্রয়োগ (Resin Application)
- লিকুইড সিনথেটিক রেজিন মোল্ডে চাপের মাধ্যমে ইনজেকশন করা হয়।
- রেজিন ফাইবারগ্লাসকে সম্পূর্ণভাবে স্যাচুরেট করে এবং শক্তিশালী শেল গঠন করে।
- রেজিনের কম্পোনেন্ট:
- Part A – Resin Base:
- Unsaturated Polyester Resin (UPR): সস্তা ও সাধারণ।
- Epoxy Resin: উচ্চ মানের, শক্তিশালী।
- Vinylester Resin: মধ্যম মানের।
- Part B – Hardener (Catalyst): কেমিক্যাল যা রেজিনকে শক্ত করে।
- অতিরিক্ত: Pigments, Fillers, Accelerators।
- Part A – Resin Base:
- বাংলাদেশে রেজিন সাধারণত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার কেমিক্যাল সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। Hexion, Huntsman, Scott Bader, Reichhold ইত্যাদির স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে।
৪. কিউরিং (Curing):
- রেজিন ভর্তি ফাইবারগ্লাসের মোল্ড হিট করা হয়।
- কেমিক্যাল রিয়াকশন শুরু হয়, রেজিন শক্ত হয়ে যায়।
৫. ডিমোল্ডিং এবং ট্রিমিং:
- শেল মোল্ড থেকে বের করা হয়।
- অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলা হয়। প্রিসিশন রোবটিক ট্রিমিং মেশিন ব্যবহার করা হতে পারে।
ধাপ ২: ইনার লাইনার তৈরি (EPS Foam)
EPS (Expanded Polystyrene) হলো হেলমেটের শক্তি শোষণকারী অংশ।
১. ব্লক প্রস্তুতি:
- বড় EPS ব্লক গরম তার দিয়ে ছোট হেলমেট-সাইজ ব্লকে কাটা হয়।
২. মোল্ডিং / এক্সপ্যানশন:
- ছোট ব্লক মোল্ডে রাখা হয়।
- সিল করা মোল্ডে স্টিম দেওয়া হয়।
- beads ফেটে একসাথে মিশে সম্পূর্ণ ফোম লাইনার তৈরি হয়।
৩. কুলিং ও ডিমোল্ডিং:
- মোল্ডকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়।
- সম্পূর্ণ লাইনার বের করা হয়, যা হেলমেটের ভিতরের আকার অনুযায়ী।
৪. ভেন্টিং ও চ্যানেল কাটা:
- CNC রাউটার ব্যবহার করে ভেন্ট চ্যানেল এবং হোল প্রিসিশনসহ কাটা হয়।
ধাপ ৩: অ্যাসেম্বলি ও ফিনিশিং
১. শেল ও লাইনার সংযুক্তি:
- EPS লাইনার শেলের ভিতরে রাখা হয়।
- স্পেশাল আঠা (adhesive) ব্যবহার করে স্থায়ীভাবে বন্ড করা হয়।
২. কমফোর্ট প্যাডিং:
- চেক প্যাড: হাতে বসানো হয়।
- ক্রাউন প্যাড: হেলমেটের উপরের অংশে।
- নেক রোল: নিচের অংশে বসানো হয়।
- প্যাডগুলো মাল্টি-লেয়ার ফোম এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি, প্রয়োজনে ধোয়া যায়।
৩. ভিসর / শিল্ড অ্যাসেম্বলি:
- পলিকার্বনেট ভিসর ইনজেকশন মোল্ডিং প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।
- বেস প্লেট শেলের সাথে Rivet বা স্ক্রু করা হয়।
- পিভট ও লকিং মেকানিজম বসানো হয়।
৪. চূড়ান্ত এক্সটারিয়র ফিনিশিং:
- পেইন্টিং ও গ্রাফিক্স: অটোমেটেড স্প্রেয়ার ও রোবট দ্বারা।
- চূড়ান্ত ক্লিয়ার কোট প্রয়োগ।
- চীন স্ট্র্যাপ, D-Rings Rivet বা সেলাই করা হয়।
ধাপ ৪: গুণমান নিয়ন্ত্রণ ও প্যাকেজিং
১. ইন্সপেকশন:
- পেইন্ট, গ্রাফিক্স, স্ক্র্যাচ ইত্যাদি চেক।
২. ওজন পরীক্ষা:
- প্রতিটি হেলমেটের ওজন যাচাই করা হয়।
৩. সার্টিফিকেশন:
- DOT, ECE, SNELL অনুযায়ী টেস্ট।
- লেবেল বসানো হয়।
৪. প্যাকেজিং:
- হেলমেট পরিষ্কার করা হয়, ডকুমেন্টেশন ফিট করা হয়, বাক্সে রাখা হয়।
মূল উপকরণ
- শেল: ফাইবারগ্লাস, কার্বন ফাইবার, Kevlar
- ইমপ্যাক্ট লাইনার: EPS ফোম/ EPP
- কমফোর্ট প্যাডিং: মাল্টি-ডেনসিটি ফোম, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ফ্যাব্রিক
- ভিসর/শিল্ড: স্ক্র্যাচ-রেজিস্ট্যান্ট পলিকার্বনেট
- হার্ডওয়্যার: প্লাস্টিক, ধাতু
বাংলাদেশে রেজিন, ফাইবারগ্লাস ও অন্যান্য উপকরণ
- রেজিন (Polyester/Epoxy/Vinylester): ঢাকার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে পাওয়া যায়। স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর বা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড Hexion, Huntsman, Scott Bader ইত্যাদির মাধ্যমে।
- ফাইবারগ্লাস: সাধারণত আমদানি করা হয়। কম্পোজিট সরবরাহকারী বা টেকনিক্যাল টেক্সটাইল কোম্পানি থেকে।
- মোল্ড রিলিজ এজেন্ট: একই সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পাওয়া যায়।
এই পুরো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হেলমেট হয় উচ্চ–প্রিসিশন সেফটি ডিভাইস, যা চালকের মস্তিষ্ক ও মাথা সুরক্ষা দেয় এবং একই সাথে আরামদায়ক ও স্টাইলিশ।